1. live@www.sangbadeisamay.com : news online : news online
  2. info@www.sangbadeisamay.com : সংবাদ এই সময় :
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

কোন স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রঙ রাজনীতি?

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ২০৩ বার পড়া হয়েছে

আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল

শিক্ষকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান। ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক দলগুলোর মতো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দলীয় বিভক্তি চরমে পৌঁছেছে। এই বিভক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্যই বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নীল, সাদা, গোলাপি প্রধানত এই তিন রঙে বিভক্ত। এর মধ্যে যেকোনো একটি রঙের নাম বললেই কারও বুঝতে অসুবিধা হয় না নির্দিষ্ট শিক্ষক কোন দল ও নীতি ধারণ করেন। তবে কিছু কিছু শিক্ষককের ক্ষেত্রে রঙ বললেই পরিচয় মেলা কষ্টসাধ্য। কেননা তারা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের রঙ পরিবর্তন করেন।

বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, শিক্ষকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে দিনে দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে সবগুলো পদে নিয়োগ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে দলীয় পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া হয়, যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা নীল দলের রাজনীতি করেন, বিএনপি ও জামায়াতপন্থীরা সাদা এবং বামপন্থী হিসেবে পরিচিত শিক্ষকরা গোলাপী দল করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদের শাসনামলে নীল দল থাকার পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামের আরও দুটি সংগঠন গড়ে উঠে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামে প্রগতিশীল ও বাম মতাদর্শের শিক্ষকরাও একটি সংগঠন করেন। এছাড়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপের ব্যানারে আওয়ামীপন্থী চিকিৎসক ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের ব্যানারে বিএনপি অনুসারী চিকিৎসক রাজনীতি করে থাকেন।

শিক্ষকরা দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় শিক্ষকরা এগিয়ে না এসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের তাঁবেদারি করছেন। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে। যেই আন্দোলনের শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা পর্যায়ক্রমে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল থেকে শুরু করে প্রশাসনের কোনো কর্তাব্যক্তিকে শিক্ষার্থীদের পাশে দেখা যায়নি। তারা যতটা পেরেছেন ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করেছেন। অপরদিকে এই আন্দোলনে বিস্ফোরণ ঘটে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিরস্ত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে।

আবু সাঈদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় সেদিন বেরোবির ২০০ শিক্ষকদের মধ্যে কেউ এগিয়ে না আসলেও পুলিশ ও ছাত্রলীগের সহযোগী হিসেবে দুই শিক্ষককে দেখা গেছে। তারা হলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদ মণ্ডল ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান।
ওইদিন সন্ধ্যায় আসাদ মণ্ডল একাধিক গণমাধ্যমে কথা বলেন এবং উপাচার্যকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার জন্য শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করেন। শুধু তাই নয়, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে মামলা করেন উপাচার্য হাসিবুর রশীদের পিএস খাইরুল ইসলাম।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে সারাদেশে। ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কমপক্ষে ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন, পদত্যাগের অপেক্ষায় রয়েছেন আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। দেশের ইতিহাসে সরকার পরিবর্তনের পর একসঙ্গে এতগুলো বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। পাশাপাশি উপউপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, হল প্রভোস্টসহ প্রশাসনিক পদেও গণ পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে।

কেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য ও প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত কর্তা ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক সারজিস আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোটা আন্দোলনে যখন নির্বিচারে পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় তখন নীল দল কিংবা সরকার সমর্থিক শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে কিছু শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন। একইভাবে আন্দোলনের শুরুতে সাদা দলের শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তবে আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের কয়েকজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা। এই ফোরামের বেশীরভাগ শিক্ষকই বাম মতাদর্শের। তারা আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ও পুলিশের গুলি বন্ধ করতে মানববন্ধ ও সভা সেমিনার করেছিলেন, পুলিশ যাতে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যেতে না পারে সে লক্ষ্যেও তারা পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন, থানা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতেও দেখা গেছে তাদের।

গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নীল দলের শিক্ষকরা কিছুটা বেকায়দায় পড়লেও হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সাদা দলের শিক্ষকরা। তারা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে বিভিন্ন পদ দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং উপাচার্য হিসেবে নিজ মতাদর্শের কাউকে পেতে তদবির চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সংখ্যায় কম থাকার কারণে নিজেদের স্বার্থ আদায় করতে তারা বিগত উপাচার্যের প্রশাসনে ছিলেন এমন শিক্ষক নেতা ও শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অপরদিকে এই সময়েও বিভক্তির রাজনীতি করছেন নীল দল ও আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষক নেতারা। তবে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি এখন চরমে। যে শিক্ষকরা বর্তমান উপাচার্যের সময় পদ পদবিতে ছিলেন তারা পদ বাঁচাতে মরিয়া হলেও যারা সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা এখন উপাচার্যকে বিদায় করতে আন্দোলন করছেন কিংবা পেছন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

শিক্ষকদের এই বিভক্তির রাজনীতি থেকে বাদ যায়নি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশের প্রথম মেডিক্যাল হিসেবে যাত্রা শুরু করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ড্যাব নেতাদের দখলে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে গুছাতে চায় বলে দাবি করছে। ইতোমধ্যে তারা নিজেদের ১৭৩ জন চিকিৎসকের পদোন্নতি জোর করে আদায় করে নিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও পদোন্নতি নিতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেই পুরনো রাজনীতি ও বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক রাজনীতিসহ সব রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে মানসিকতায় পরিবর্তন না আসলে রাজনীতি বন্ধ করে কতটা পরিবর্তন সম্বব তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তার পেছনে শিক্ষক রাজনীতির একটা দায় আছে। শিক্ষকদের মৌলিক কাজ পড়ানো এবং গবেষণা। এখন পড়াতে হলে তো আগে পড়তে হবে। শিক্ষকরা যদি অধ্যয়নের সময়টুকু রাজনীতির পেছনে ব্যয় করেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন, কোথায় গেলে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারবেন সেসবের জন্য তদবিরে ব্যস্ত থাকেন তখন প্রশ্ন আসে যে, তিনি পড়বেন কখন আর গবেষণাই বা করবেন কখন?

তিনি বলেন, পুরনো ধারার রাজনীতি থেকে শিক্ষকদের বের হয়ে আসতে হবে। না হলে দিনে দিনে শিক্ষার মান আরও তলানিতে যাবে। এরশাদ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারে স্বার্থের পক্ষে তাঁবেদারি শুরু করেন। তবে তখনও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পদার্পণের পর শিক্ষকরা অধিকমাত্রায় দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ- বিএনপি উভয় দলই চালু রাখে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নিলে ২০০৮ সাল থেকে টানা ৪ মেয়াদে শাসন ক্ষমতা পরিচালনায় থাকায় দলীয়করণের সব রেকর্ড ভেঙে যায়। এই সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয় প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে। উপাচার্য নিয়োগের পূর্ব শর্ত হিসেবে দলীয় পরিচয় বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। কেবল তাই নয় যাদের দলীয় পরিচয় থাকলেও স্বাধীনচেতা ও শক্ত মেরুদণ্ড ছিল তাদেরও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হত না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সব দিক থেকে পরিবর্তনের ডাক এসেছে শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত